১৮৪১ সালে দেশের ঐতিহ্যবাহী কলেজ ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বিদ্যাপীঠ লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ছাত্রদের শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক নেতৃত্বদানে সদা প্রস্তুত। চিন্তাশীল, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নাগরিক ও মননশীল মানুষ হিসাবে ছাত্রদের তৈরী করার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে এই বিদ্যাপীঠ। স্বাধিকার আন্দোলন, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও দেশের স্বাধীনতা অঞ্জনের ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অগন্য। দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সময়ের সাথে সাথে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের সহ-পাঠ্য কার্যক্রমে সম্পৃক্ততার কলরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে এখানে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), রোভার স্কাউট, বেঞ্চ কিসে এবং সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠেছে বিতর্ক ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব ও সংগীত বিদ্যালয়। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে যুব সমাজের নৈতিক উন্নতি সাধন। তাদের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯২৩ সালে প্রণীত ইন্ডিয়ান টেরিটোরিয়াল ফোর্সেস অ্যাক্ট এর অধীনে চাকা কলেজ, ঢাকা প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কোরের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ের পরিক্রমায় পরিবর্তন এবং পরিবর্ধনের মাধ্যমে এই সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ তৎকালীন ইউওটিসি, বিসিসি, জেসিসি একত্রে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) নামে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা কলেজের ক্যাডেট ল্যান্স কর্পোরাল আলী আহসান মোহাম্মদ কাঞ্চন শহীদ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা কলেজের অন্যান্য ছাত্রদের আত্নত্যাগের সাথে ঢাকা কলেজ প্লাটুনের একজন ক্যাডেটের আত্নত্যাগের কথা কলেজের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমরা ঢাকা কলেজের সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। কলেজ পর্যায়ে জাতীয় ক্যাডেট কোর প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এবং ঢাকা কলেজ প্লাটুনের কার্যক্রমের ইতিহাস এক ও অভিন্ন। বিএনসিসি সদরদপ্তরের অধীনে যে ৫ টি রেজিমেন্ট আছে তার মধ্যে রমনা রেজিমেন্ট অন্যতম। রমনা রেজিমেন্টের অধীন ১-বিএনসিসি ব্যাটালিয়নের ব্রাভো কোম্পানির সদর দপ্তর ঢাকা কলেজ প্লাটুনে অবস্থিত। প্রতি বছর ক্যাডেট ভর্তি নীতিমালা অনুসরণ করে উচ্চমাধ্যমিক এবং সম্মান শ্রেণীর ছাত্রদের মধ্য থেকে লিখিত পরীক্ষা, শারীরিক পরীক্ষা ও মৌখিক সাক্ষাকার গ্রহণের মাধ্যমে এবং অন্যান্য কো-কারিকুলাম কার্যক্রমে পারদশীদের প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়। পরবর্তীতে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের মধ্য থেকে ১-বিএনসিসি ব্যাটালিয়নের সম্মানিত এ্যাডজুটেন্ট মহোদয় নিজে উপস্থিত থেকে যোগ্য এবং চৌকস ক্যাডেট নির্বাচন করেন। নির্বাচিত ক্যাডেটদেরকে নিয়মিত সাপ্তাহিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এই প্রশিক্ষণে প্লাটুন অধিনায়ক, অন্যান্য পিইউও গণ, সামরিক প্রশিক্ষক, সিনিয়র ক্যাডেটয়া উপস্থিত থাকেন। কলেজের অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষ মহোদয় সাপ্তাহিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সরাসরি তদারকি করে থাকেন এবং এর কার্জক্রমকে আরও গতিশীল ও বেগবান করার জন্য আদেশ, উপদেশ, নির্দেশনা এবং উত্সাহ প্রদান করে থাকেন। প্লাটুনের অতীতের ধারাবাহিকতার একটা ফল হল ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে দেশের শ্রেষ্ঠ বিএনসিসি গ্রুপ নির্বাচিত হওয়া।